মাদকাসক্তির কারণ
মাদকাসক্তি একটি জটিল সমস্যা যা ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। নানা কারণে একজন ব্যক্তি মাদকের প্রতি আসক্ত হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা মাদকাসক্তির কারণ সম্পর্কে আলোচনা করবো। চলুন মাদকাসক্তির কারণ গুলো কি কি সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
মাদকাসক্তির কারণ কি?
বর্তমান সময়ে মাদকাসক্তি সমাজের জন্য মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আর মাদকাসক্তির প্রভাব যে মানব জীবনে কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। একজন মানুষের মাদকের প্রতি আসক্ত হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে একজন ব্যক্তির মাদকাসক্তির কারণ গুলো কি কি হয়, সেগুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
০১- মাদকের সহজলভ্যতা
মাদকাসক্তি বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বাজারে সিগারেট, গাঁজা, হেরোইন, মদ, ফেন্সিডিলের মতো মাদক সহজেই পাওয়া যায়। এমনকি স্কুল কলেজের কাছেও মাদকের সরবরাহকারীদের দেখা যায়। আর এই সহজলভ্যতা তরুণ প্রজন্মকে মাদকের প্রতি আকৃষ্ট করে তাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
০২- সঙ্গদোষে মাদক আসক্তি
মনে রাখবেন, একজন ভালো ব্যক্তিও মাদকাসক্ত বন্ধুদের প্রভাবে এই বদ অভ্যাসের শিকার হতে পারে। বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে বা সাহসের পরিচয় দিতে অনেকেই মাদক গ্রহণ করে থাকে। এই খারাপ সঙ্গ তরুণ প্রজন্মকে মাদকের জগতে টেনে নিয়ে তাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে।
০৩- সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা
পারিবারিক নিয়মের অভাব, অশান্তি, দারিদ্র্য ইত্যাদি কারণে অনেকেই মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অনেক মানুষ তাদের পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে বা মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে মাদকের আশ্রয় নেয়। কিন্তু এই ‘শান্তি’ ক্ষণস্থায়ী, বরং দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয়ের সূচনা ডেকে আনে সেটা তারা বুঝতে পারেনা।
০৪- হতাশা ও দুশ্চিন্তা
ব্যর্থতা, প্রিয়জনের সাথে বিচ্ছেদ, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি কারণে অনেক মানুষ হতাশ ও দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে মাদকের আশ্রয় নেয়। মাদকের নেশায় তারা তাদের অতীত ও বর্তমান দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু এই ‘ভুলে থাকা’ তাদের আরও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে তাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
০৫- কৌতূহল ও আনন্দ
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীরা কৌতূহলবশত বা সাময়িক আনন্দ পেতে মাদক গ্রহণ করে। বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে বা নিজেকে ‘কুল’ মনে করে তারা এই ভুল পথে পা বাড়ায়। কিন্তু এই ‘কৌতূহল’ এবং ‘আনন্দ’ তাদের জীবনে ‘বিষণ্ণতা’ এবং ‘দুঃখ’ ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনে না সেটা তারা কখনই বুঝতে পারেনা।
মাদকাসক্তির কারণ হিসেবে গবেষনা কি বলছে?
মাদকাসক্তির কারণ গুলো কি কি তা আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম। তবে এর পাশাপাশি আপনাকে জানতে হবে, মাদকাসক্তির কারণ হিসেবে গবেষনা কি বলছে।
মাদকাসক্তি – এমন একটি শব্দ যা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, বরং তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজকেও বিধ্বস্ত করে দিতে পারে। যদিওবা আগের দিন গুলোতে ধারণা করা হয়েছিলো যে, মাদকাসক্তি কেবল মানুষের মানসিক দুর্বলতার কারণ। কিন্তু নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য!
কারণ, গবেষণায় বলা হয়েছে মস্তিষ্কের এক বিশেষ প্রোটিনের ঘাটতি মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হতে পারে! গবেষকরা দেখেছেন, মাদকাসক্তদের মস্তিষ্কে GAT-3 নামক প্রোটিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। GAT-3 প্রোটিনের মূল কাজ হলো ডোপামিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করা।
আর ডোপামিন হলো আনন্দ, অনুপ্রেরণা এবং পুরস্কারের অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত। GAT-3 প্রোটিনের ঘাটতির ফলে ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা মাদকাসক্তির ঝুঁকি অনেক বেশি করে তোলে। GAT-3 প্রোটিনের ঘাটতি কেবল ডোপামিন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা করে না, বরং আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকেও ব্যাহত করে। এর ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা তীব্র আবেগের কবলে পড়ে, যা তাদেরকে মাদক সেবনের দিকে ধাবিত করে।
আপনার জন্য কিছুকথা
মাদকাসক্তির কারণ গুলো কি কি আশা করি এ বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকবেনা। তবে আপনি যদি আমাদের নিকট কিছু জানতে চান তালে নিচে কমেন্ট করবেন।
মনে রাখবেন, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে মাদকাসক্তির প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। নিজের পরিবারের কিশোর, কিশোরী এমনি প্রাপ্তবয়স্কদের মাদকের ক্ষতি সম্পর্কে জানিয়ে দিতে হবে। তাহলে আমরা মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবো।