মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য | Omega Point

তরুণ প্রজন্ম, যারা দেশের ভবিষ্যৎ, তারা আজ মাদকের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত। মাদকের কুপ্রভাবে নষ্ট হচ্ছে তাদের মেধা, শক্তি, সৃজনশীলতা এবং ধ্বংস হচ্ছে তাদের জীবন। এই প্রবন্ধে আমরা মাদক প্রতিরোধে তরুন সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করবো।

মাদকাসক্তি ও আজকের তরুন প্রজন্ম

মাদক – শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে অন্ধকার জীবনের এক ভয়ঙ্কর চিত্র। তরুণ প্রজন্ম, যারা জাতির ভবিষ্যৎ, তারাই আজ মাদকের কালো থাবার কবলে নিপতিত হচ্ছে। মাদক ব্যবহারের ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, যার প্রভাব ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ সকল স্তরেই পড়ে। চলুন জেনে নেই, মাদকাসক্তির ফলে তরুন প্রজন্মের কি কি ক্ষতি হয়।

০১-শারীরিক ক্ষতি 

মাদক আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাদকাসক্ত তরুণদের মধ্যে হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার, যকৃতের ক্ষতি এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। মাদকের প্রভাবে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে।

০২-মানসিক ক্ষতি

মাদক আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে ফেলে। মাদকাসক্ত তরুণদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগের অভাব, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। মাদকের প্রভাবে তাদের চিন্তা ভাবনার ক্ষমতাও হ্রাস পায়।

০৩-সামাজিক ক্ষতি

মাদকাসক্ত তরুণরা প্রায়শই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। মাদকের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে তারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধ করতে পারে। মাদকের প্রভাবে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয় এবং তারা বিচ্ছিন্ন ও হতাশ হয়ে পড়ে।

মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য

মাদকের বিষাক্ত থাবায় আজ গোটা বিশ্ব বিষিয়ে উঠেছে। আর আমাদের বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কারণ, মাদকের কুপ্রভাবে সমাজের সকল স্তরের মানুষ আজ বিপন্ন। তাই এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। বিশেষ করে মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের দায়িত্ব- কর্তব্য রয়েছে সেগুলোর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি

মাদকের কুপ্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মাদকবিরোধী সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং আলোচনা সভার আয়োজনে তারা অংশগ্রহণ করতে হবে। নাটক, গান, কবিতা এবং আর্টের মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে মাদক বিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে।

প্রতিরোধ গড়ে তোলা

তরুণদের মাদকের প্রতি আকর্ষণ রোধে সচেতন থাকতে হবে। তাদের মধ্যে নীতিবোধ, আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তরুনদের সুস্থ বিনোদন, খেলাধুলা এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিতে হবে।

সহায়তা প্রদান

মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, মাদকাসক্ত বন্ধুদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে মাদক মুক্তির জন্য অনুপ্রাণিত করা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করা তাদের অন্যতম কর্তব্য হিসেবে গন্য করতে হবে। যারা ইতিমধ্যে মাদকে আসক্ত তাদের পাশে থেকে মানসিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।

সৃজনশীল কর্মকাণ্ড

মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে আপনাকে তরুণদের মধ্যে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটাতে হবে। খেলাধুলা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এতে তাদের মনোযোগ মাদক থেকে অন্যদিকে স্থানান্তরিত হবে।

আইন মেনে চলা

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে চলা সকলের কর্তব্য। তরুণদের মাদক বিরোধী আইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো কে সহায়তা করতে হবে। যাতে করে আমাদের সমাজ এর একটি মানুষও মাদকের প্রতি আসক্ত না হয়।

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

একটা বিষয় আমাদের সকলের মাথায় রাখা উচিত। সেটি হলো, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল মাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং এটি আমাদের সকলের সামাজিক দায়িত্ব। আর আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা একটি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারব। তাই আমাদের মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো অবশ্যই জেনে নিতে হবে।