আপনি কি মানসিক চাপে ভুগছেন? জেনে নিন এই ১০ টি উপায়

আমাদের জীবন হলো ট্রেনের মতো, যা ছুটে চলেছে অবিরাম। কখনো হাসি, কখনো আনন্দ, কখনো আবার কষ্ট, ভালো-খারাপ সব মিলিয়ে তৈরি হয় আমাদের জীবন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, অথবা সামাজিক নানা কারণে মাঝে মাঝে আমরা আটকে পড়ি মানসিক চাপের জালে। এটা যেন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। কিন্তু যখন এই চাপ অত্যধিক দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে, তখনই বুঝে নিতে হবে যে, আমাদের সতর্ক হওয়ার সময় এসে গেছে।

 

আর আপনাকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে সতর্ক করার জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। কারন, এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় সম্পর্কে বলা হবে। যদি আপনি সেগুলো সঠিক ভাবে অনুসরন করতে পারেন, তাহলে আপনার মানসিক চাপ অনেক অংশে কমে যাবে। তো চলুন এবার তাহলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

মানসিক চাপ বলতে কী বোঝায়?

আমাদের জীবনে মানসিক চাপ যেন এক অভিশাপের মতো। ছাত্র জীবনের পরীক্ষা থেকে শুরু করে কর্ম জীবনের চ্যালেঞ্জ, ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতন – সর্বত্রই চাপের ছায়া। কিন্তুু কখনও কি আপনি ভেবে দেখেছেন যে, এই মানসিক চাপ বলতে কি বোঝায়? 

 

সহজ কথায় বলতে গেলে, মানসিক চাপ হলো এক ধরণের মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। যখন আমরা কোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে অক্ষম বোধ করি, তখনই তৈরি হয় এই মানসিক চাপ। যা এক মূহূর্তেই একজন মানুষের জীবনকে এলোমেলো করে দিতে পারে। 

কেন আমরা মানসিক চাপ ভোগ করি?

ছোটবেলা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত, আমরা সকলেই বিভিন্ন ধরণের চাপের সম্মুখীন হই। তবে কিছু মানসিক চাপ আছে যা আমাদেরকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে, কিন্তুু অতিরিক্ত চাপ আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে দেয়। তবে মানুষ ভেদে এই মানসিক চাপের কারণ গুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। আর যেসব কারণে অধিকাংশ সময় আমাদের মানসিক চাপে থাকতে হয় সেই কারণ গুলো নিচে শেয়ার করা হলো। 

০১-নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও দুশ্চিন্তা

মানুষের মন খুব অদ্ভুত। যা এক মুহুর্তে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হতে পারে, আবার পরের মুহুর্তেই হতাশায় ডুবে যেতে পারে। এই চিন্তা ভাবনার খেলা অনেক সময় আমাদের জীবনে নেমে আনে অশান্তির ঝড়। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, দুশ্চিন্তা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা এবং হতাশা – এইসব কিছু মিলে যখন আমাদের মনকে ঘিরে ধরে, তখনই জন্ম নেয় মানসিক চাপের ভয়াবহ রূপ।

 

কিছু নেতিবাচক চিন্তাভাবনা যেমন ‘আমি পারব না’, ‘সবকিছুই শেষ’, ‘ভবিষ্যৎ অন্ধকার’, ‘আমি ব্যর্থ’ – এই ধরণের চিন্তা ভাবনা আমাদের মনে দুশ্চিন্তার বীজ বপন করে। অতীতের ভুল, বর্তমানের সমস্যা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এই দুশ্চিন্তা কে আরও তীব্র করে তোলে। ফলে আমাদের সবার মনের উপর হতাশা নেমে আসে।

০২-নিজেকে ছোট করে দেখা

আত্মসম্মান এবং নিজেকে মূল্যবান ভাবার ধারণা, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। যখন আমরা নিজেদের কে ছোট করে দেখি, হীনমন্যতায় ভুগি এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব অনুভব করি, তখন মানসিক চাপ বেড়ে যায়। এই চাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে, তা বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার দিকে ধাবিত করে ফেলে।

 

কম আত্ম সম্মানের মানুষরা প্রায়শই নেতিবাচক চিন্তা ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকে। তারা নিজেদের সম্পর্কে, তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এই ধরনের মানুষরা তাদের সিদ্ধান্ত এবং ক্ষমতায় সন্দেহ করে। তারা নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভয় পায় এবং ব্যর্থতার আশঙ্কায় থাকে।

০৩-বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া

মানসিক চাপের আরেকটি ভয়াবহ পরিণাম হলো অতিরিক্ত উদ্বেগ। ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্পষ্টতা, অজানা আতঙ্ক, সবসময় মনে ভয়ের ছায়া – এইসব কিছুই উদ্বেগের লক্ষণ। চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা উদ্বেগের অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তোলে।

 

দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে থাকলে, মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো মেজাজ নিয়ন্ত্রণকারী নিউরো ট্রান্সমিটারের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে মন খারাপ, আনন্দহীনতা, ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা – বিষণ্ণতার লক্ষণ গুলো একের পর এক বেরিয়ে আসে।

০৪-শারীরিক অসুস্থতার প্রভাব

মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি – এগুলো হলো সাধারণ শারীরিক অসুস্থতা যা মানসিক চাপের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

 

মানসিক চাপের সময় আমাদের শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই হরমোন দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপের জন্য দায়ী। কর্টিসল রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি করে। এর ফলে মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা, হজমের সমস্যা, এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে।

০৫-পারিবারিক অশান্তি ও কলহ

মানুষের জীবনে পরিবার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ পরিবার হলো সুখ, ভালোবাসা এবং সমর্থনের আশ্রয়স্থল। কিন্তু যখন এই পরিবারে দেখা দেয় অশান্তি, কলহ এবং বিবাদ, তখন তা মানুষের জীবনে নেমে আসে অদৃশ্য ঝড়ের মতো, যা আমাদের জীবনে নিয়ে আসে অপরিসীম মানসিক চাপ।

 

একটি পরিবারে অশান্তির অনেক কারণ থাকে। আর্থিক সমস্যা, পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি, অবিশ্বাস, যোগাযোগের অভাব, সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক অসহ্য পরিবেশ। ঝগড়ার তীব্রতা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন শুরু হয় মানসিক চাপের যন্ত্রনা। তখন মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, বিষণ্ণতা নেমে আসে। ঘুমের অসুবিধা, ক্লান্তি, বিরক্তি, মনোযোগের অভাব – সব মিলিয়ে জীবন হয়ে ওঠে অসহ্য।

০৬-অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা

অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা মানে আয়ের অস্থিরতা, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধোঁয়াশা কে চিহ্নিত করা হয়। এই অজানা জিনিস গুলো মনকে অস্থির করে তোলে, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের জন্ম দেয়। প্রতিদিনের খরচ, ঋণ পরিশোধ এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও চিকিৎসার খরচ মেটানোর চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়।

 

এছাড়াও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত থাকা মানসিক চাপের একটি প্রধান কারণ। যখন আমরা জানি না আগামী দিন গুলোতো আমাদের জন্য কী রয়েছে, তখন আমরা উদ্বিগ্ন, ভীত এবং হতাশা বোধ করি। বিশেষ করে যখন মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত আয় নিশ্চিত থাকেনা, তখন এই অনিশ্চয়তা আমাদের জীবনে আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

০৭-সামাজিক চাপ

মানুষ সামাজিক জীব। তাই আমরা সবসময় অন্যদের সাথে যুক্ত থাকতে চাই, তাদের সাথে মিশে যেতে চাই, তাদের স্বীকৃতি পেতে চাই। কিন্তু এই ইচ্ছা গুলো অনেক সময় পরিণত হয় এক অদৃশ্য বেড়া জালে, যা আমাদের মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এই বেড়াজালের তিনটি প্রধান স্তম্ভ হল, সামাজিক প্রত্যাশা পূরণের চাপ, সমাজের সমালোচনা এবং বৈষম্য।

 

সমাজ আমাদের উপর বিভিন্ন ধরণের প্রত্যাশা চাপিয়ে দেয়। শিক্ষাগত সাফল্য, ভালো চাকরি, সুন্দর সংসার – এই তালিকা কতটা দীর্ঘ তা আমরা সবাই জানি। আর এই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেই শুরু হয় আত্ম-সন্দেহ, হতাশা এবং অপরাধবোধ।

 

আমাদের চারপাশে সবসময়ই এমন কিছু লোক থাকে যারা আমাদের সমালোচনা করতে পছন্দ করে। পোশাক, চালচলন, কথা বলার ধরন – সবকিছু নিয়েই তারা মন্তব্য করে। এই সমালোচনা, বিশেষ করে যখন নেতিবাচক হয়, তখন আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয় এবং মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।

০৮-সম্পর্কের সমস্যা

আমরা সবাই স্নেহ, সঙ্গ এবং সমর্থনের জন্য একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। যখন আমরা সুস্থ সম্পর্কে থাকি, তখন এটি আমাদের আনন্দ এবং পূর্ণতা প্রদান করে। কিন্তু যখন সম্পর্ক সমস্যায় পড়ে, তখন এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে দেয়।

 

বিচ্ছেদ, সম্পর্কের অবনতি এবং জগড়া – এই সবই সম্পর্কের সমস্যার উদাহরণ। বিচ্ছেদ যখন ঘটে, তখন এটি ব্যথা, দুঃখ এবং একাকীত্বের অনুভূতি নিয়ে আসে। সম্পর্কের অবনতি হলে, দম্পতিরা দূরত্ব অনুভব করে এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব দেখা দেয়। জগড়া হলে, উত্তেজনা এবং রাগের পরিবেশ তৈরি হয়, যা মানসিক চাপের অন্যতম কারণ।

মানসিক চাপে থাকলে আমাদের কি কি শারীরিক অসুবিধা হয়?

মানসিক চাপ শুধু মনের উপরেই প্রভাব ফেলে না, বরং আমাদের শরীরেও নানা অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ মানসিক চাপ যেন এক অদৃশ্য বিষ, যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে ক্ষয় করে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক মানসিক চাপে থাকলে আমাদের কি কি শারীরিক অসুবিধা হয়। 

 

  • দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  • মানসিক চাপের সময় আমাদের শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পেশীতে টান ও ব্যথা দেখা দেয়।
  • মানসিক চাপের ফলে প্রচন্ড মাথাব্যাথা হতে পারে। 
  • পেট খারাপ, বদহজম, এসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। 
  • সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো রোগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ব্রণ, একজিমা, সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।
  • অনিদ্রা, ঘুমে অসুবিধা, ঘুমের গুণমান হ্রাসের মতো সমস্যা শুরু হয়। 
  • দীর্ঘমেয়াদী চাপের ফলে ক্লান্তি ও অবসাদ বোধ লক্ষ করা যায়।
  • চাপের কারণে মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা হয়।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় জানলে আপনার জীবন ও বদলে যেতে পারে

অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে আমাদের কোন কোন শারীরিক সমস্যা হতে পারে সেগুলো উপরের তালিকায় শেয়ার করা হয়েছে। তবে ব্যক্তি ভেদে এই সমস্যা গুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। 

কী কী উপায়ে মানসিক চাপকে মোকাবেলা করবেন? 

বর্তমানের আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ যেন আমাদের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার – এই সবকিছুই আমাদের মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ শুধুমাত্র মানসিক ক্ষতিই করে না, বরং এর শারীরিক প্রভাবও ভয়াবহ।

 

তাই এই আলোচনায় আমরা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় শেয়ার করবো যা আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, এই উপায় গুলো কেবলমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য। তবে যদি আপনার মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে অবশ্যই একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় নিচে দেওয়া হলো

০১) আপনার ভালো লাগা কাজ করুন

মানসিক চাপ থেকে মুক্তির এক অদ্ভুত উপায় লুকিয়ে আছে আপনার পছন্দের কাজের মধ্যে। গান শোনা, বই পড়া, ছবি আঁকা, বাগান করার মতো যেসব কাজ আপনার মনকে আনন্দ দেয়, সেগুলোই হতে পারে আপনার মানসিক  চাপের প্রতিষেধক। 

 

কারণ যখন আপনি প্রিয় কাজে মনোনিবেশ করবেন, তখন মস্তিষ্ক ডোপামিন নামক এক ধরণের নিউরো ট্রান্সমিটার নিঃসরণ করে। এই ডোপামিন আপনাকে ভালো অনুভূতি বোধ করতে সাহায্য করবে, আর আপনার মানসিক  চাপ কমিয়ে দিবে।

 

এছাড়াও, পছন্দের কাজ মনকে শান্ত করে, একাগ্রতা বাড়ায় এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। তাই যখন চাপে ভুগবেন, তখন বসে না থেকে একটু ব্রেক নিবেন। তারপর আপনার প্রিয় গান শুনবেন, মনো মুগ্ধকর কোন বইয়ের পাতায় চোখ রাখবেন, অথবা প্রিয় খেলায় হারিয়ে যাবেন। দেখবেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার মন ভালো হয়ে উঠবে, সেইসাথে আপনার মানসিক চাপও কমে যাবে।

০২) চুইংগাম চিবাবেন

চুইংগাম চিবানোর সময়, আপনার মুখের পেশী গুলো নিয়মিত নড়াচড়া করে। এতে মুখের রক্ত ​​সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহও বৃদ্ধি পায়। প্রচুর অক্সিজেন সরবরাহের ফলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় ও সজাগ থাকে, যার ফলে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।

 

গবেষণায় দেখা গেছে যে, চুইংগাম চিবানো ব্যক্তির মেমরি, প্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা ধরন উন্নত হয়। এর কারণ হল চুইংগাম চিবালে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় থাকে যা মনোযোগ, মেমরি এবং শেখার বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে।

০৩) যোগ ব্যায়াম করুন

যোগ ব্যায়ামে প্রাণায়াম অনুশীলন শ্বাস প্রশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি করে। গভীর ও ধীর শ্বাস প্রশ্বাস মন কে শান্ত করে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে। এই ব্যায়াম আমাদের মননশীলতা বৃদ্ধি করে। আর এই মননশীল অবস্থায় আপনি বর্তমান সময়ের উপর মনোযোগ দিতে পারবেন এবং অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে মুক্তি নিতে পারবেন। যা আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

০৪) ভ্রমণ করুন

যখন আমরা প্রকৃতির কোলে ফিরে যাই, তখন মনে হয় যেন এক অদ্ভুত শান্তি এসে ভরে যায়। কারণ এই সময় আমাদের মন শান্ত হয়ে যায়, চিন্তাভাবনা থেমে যায়। নীল আকাশ, সবুজ গাছপালা, মৃদু বাতাস – এই সবকিছুই আমাদের মনকে হালকা করে তোলে। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, নতুন অভিজ্ঞতা – এই সবকিছুই আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে।এর ফলে আমাদের মানসিক চাপ কমে যায়, সেইসাথে আমাদের মন ভালো হয়।

 

কারণ, ভ্রমণের সময় আমরা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করি না,এর পাশাপাশি নতুন অভিজ্ঞতাও অর্জন করি। নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হই, তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানি। নতুন নতুন খাবার খাই, নতুন নতুন জিনিস দেখি। এই সবকিছুই আমাদের সবার মনকে করে তোলে সমৃদ্ধ। যার ফলে আমাদরে মানসিক চাপ কমে যায় এবং জীবনে আসে নতুন উৎসাহ।

০৫) প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ রাখুন

প্রিয় মানুষেরা আমাদের ভালোবাসে, আমাদের পাশে থাকে। তাদের সাথে কথা বললে, সময় কাটালে আমরা এই ভালোবাসা ও সমর্থনের অনুভূতি পাই। এতে আমাদের মন ভালো হয়, চাপ কমে। মনের মধ্যে চাপ থাকলে, সমস্যা থাকলে প্রিয়জনের সাথে খুলে বললে আমরা অনেকটা হালকা বোধ করি। মনে হয়, আমাদের বোঝার মতো অনেক মানুষ আছে, যারা আমাদের পাশে আছে। যা থেকে আমরা মানসিক প্রশান্তি পাই।

০৬) মোবাইল কম্পিউটার থেকে দুরে থাকুন

আধুনিক জীবনে আমরা প্রায়শই ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে আবদ্ধ থাকি। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট – নোটিফিকেশন, আপডেট এবং ভার্চুয়াল জগতের আকর্ষণ আমাদের মনোযোগ টেনে ধরে। কিন্তু এই অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ফলে অনেকেরই মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের “নিখুঁত” জীবন দেখে হতাশা, কাজের বার্তা ও ইমেলের চাপ, এবং সর্বদা সংযুক্ত থাকার প্রয়োজনীয়তার অনুভূতি – এই সবকিছু মিলিয়ে আমাদের মন অস্থির ও চটপটে হয়ে ওঠে।

 

লেখক ক্রিস্টিন কার্লসন তার বই “ডোন্ট সোয়েট দ্য স্মল স্টাফ”-এ যুক্তি দেখিয়েছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট জানার জন্য বারবার ফোন চেক করা মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনি যদি আপনার মানসিক চাপ কমাতে চান, তাহলে অবশ্যই এই ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে নিজেকে দুরে রাখার চেস্টা করবেন। 

০৭) পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটান

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে আমাদের শরীরে কর্টিসোল নামক হরমোনের নিঃসরণ কমে। কর্টিসোল হলো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনকারী চাপের হরমোন। যখন আমরা চাপ অনুভব করি, তখন আমাদের শরীরে এই হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘমেয়াদী চাপের ফলে কর্টিসোলের অতিরিক্ত মাত্রা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে দেয়।

 

কিন্তু পোষা প্রাণীর সাথে খেলাধুলা, তাদের স্পর্শ এবং তাদের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে অক্সিটোসিন নামক হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। অক্সিটোসিন কে “ভালোবাসার হরমোন”ও বলা হয়। এই হরমোন আমাদের মনে শান্তি ও প্রশান্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। কর্টিসোলের বিপরীতে, অক্সিটোসিন রক্তচাপ কমাতে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।

০৮) ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করুন

ইসলামে মানসিক শান্তি অর্জনের জন্য বেশ কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখা মুমিনদের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ সূরা বাকারার ১৫৫-১৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যাদের ওপর কোন বিপদ এলে বলে, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’।”

 

তবে ইসলাম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মেও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এমন অনেক অনুশীলন রয়েছে। খ্রিস্টানরা প্রার্থনা, গান গাওয়া এবং বাইবেল পাঠ করেন। হিন্দুরা ধ্যান, যজ্ঞ এবং মন্দিরে যান। বৌদ্ধরা ধ্যান, মন্ত্রপাঠ এবং সঙ্গীত শোনেন। মনে রাখবেন, ধর্মীয় অনুশীলন হলো ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আপনার জন্য কোন ধর্মীয় অনুশীলনটি সবচেয়ে কার্যকর তা নির্ধারণ করতে আপনাকে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশীলন সম্পর্কে জানতে হবে এবং আপনার জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

০৯) ডায়েরী লেখার অভ্যাস করুন

আধুনিক যুগে, স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল ডিভাইসের আধিপত্যের কারণে কাগজ-কলমে লেখার অভ্যাস ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে, এই সহজ অভ্যাসটি মনের অশান্তি দূর করে অপার প্রশান্তি এনে দিতে পারে।

 

মনে ভারী কোনো চিন্তা থাকলে, কোনো বিষয়ে কষ্ট পেলে, প্রতিদিনের ছোটো বড়ো ঘটনা, আনন্দ বেদনার স্মৃতি – সবকিছু তারিখসহ ডায়েরিতে লিখে রাখবেন। এটি কেবল স্মৃতি ধরে রাখার মাধ্যম নয়, বরং অনেকদিন পর পুরনো ডায়েরি খুলে পড়লে পুরনো স্মৃতি মনে করে এক অপূর্ব আনন্দ অনুভব করবেন।

 

কিন্তু ডায়েরি লেখার গুরুত্ব শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।  নিয়মিত ডায়েরি লেখার মাধ্যমে মনের ভেতরের চাপ অনেকটাই কমে যায়। কারণ ডায়েরিতে লেখার সময় আমরা আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো কে স্পষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারি। এতে আমাদের মনের অস্পষ্টতা দূর হয় এবং সমস্যা গুলোর সমাধানের পথ খুঁজে পেতে সহজ হয়।

১০) বই পড়ার অভ্যাস করুন

একটি ভালো বই আপনাকে নিয়ে যেতে পারে এক অপূর্ব জগতে। সেখানে আপনি ভুলে যেতে পারবেন সকল চিন্তা-ভাবনা, দুশ্চিন্তা। বইয়ের পাতায় আপনি হারিয়ে যাবেন নতুন নতুন গল্পের মধ্যে, যার চরিত্র গুলোর সাথে আপনার মন একাত্ম হয়ে যাবে। আর যখন মন ভালো থাকে,তখন নতুন কোনো দুশ্চিন্তার সুযোগ থাকবেনা।

 

কারন বইয়ের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি নতুন নতুন তথ্য, ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি। এতে আমাদের চিন্তা ভাবনার জগৎ প্রসারিত হয় এবং আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে নতুন নতুন উপায় আবিষ্কার করতে পারি। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। নতুন নতুন গল্প ও চরিত্র আমাদের মনে অনুপ্রেরণা জাগায় এবং আমাদের নিজস্ব জীবনেও নতুন কিছু করার ইচ্ছা জাগ্রত করে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় এর মতো আরও গুরুত্বপূর্ন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

আজকের আর্টিকেলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় শেয়ার করা হয়েছে। আশা করি, যাদের মানসিক সমস্যা আছে তাদের জন্য আজকের শেয়ার করা টিপস গুলো যথেষ্ট হেল্পফুল হবে। আর যদি আপনার মানসিক সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন। এছাড়াও আপনি যদি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক অজানা তথ্য গুলো সহজ ভাষায় জানতে চান, তাহলে Omega Point BD এর সাথে থাকবেন।