সন্তান কে মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের ভুমিকা কী?

বর্তমান সময়ের আধুনিক জীবনে, মাদক যেন বিষাক্ত ছায়ার মতো আমাদের সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। এই ভয়াবহ বিপদের হাত থেকে সন্তানদের রক্ষা করা অভিভাবক হিসেবে আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

 

পরিবার হলো একজন শিশুর জীবনের প্রথম বিদ্যালয়। সন্তানের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। মাদকাসক্তি থেকে সন্তানকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে আমরা মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা জানার চেষ্টা করবো।

মাদকাসক্ত হয়ার প্রবনতা কোন বয়সে বেশি থাকে?

আমাদের সমাজের বুকে দানবের মতো বাস করে মাদকাসক্তি। তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে কিশোর কিশোরীরা এই অন্ধকার জালে সবচেয়ে বেশি আটকা পড়ে। কিন্তু কখন তাদের মাদকাসক্তির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে? -এবার আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।

 

আমরা জানি, কিশোর-কিশোরীরা অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। শারীরিক, মানসিক, আবেগীয় – সবদিক থেকেই তাদের জীবনে চলে এক অস্থিরতা। এই অস্থিরতার সাথে যোগ হয় বন্ধুদের প্রভাব, পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক চাপ, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা – যা তাদেরকে মাদকের দিকে ধাবিত করে।

 

আর গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাদকাসক্তির ঝুঁকি কৈশোর এবং প্রারম্ভিক যৌবন কালে সবচেয়ে বেশি থাকে। সাধারণত ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা এই ঝুঁকির মধ্যে বেশি থাকে। এই বয়সে কিশোর-কিশোরীরা মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। নতুন পরিচয়, বন্ধুদের প্রভাব, স্বাধীনতার ইচ্ছা, পারিবারিক সমস্যা, লেখাপড়ার চাপ ইত্যাদি কারণে তারা মানসিক চাপে থাকে।

কি কি কারণে আপনার সন্তান মাদকাসক্ত হতে পারে?

আমাদের সন্তান, আমাদের আশা, আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন এই স্বপ্নাচ্ছন্ন আকাশ মাদকের কালো মেঘে ঢাকা পড়তে পারে? -হ্যাঁ, মাদকাসক্তি, সমাজের এই ভয়াবহ অভিশাপ আমাদের সন্তানকেও গ্রাস করতে পারে। তাই চলুন এবার আমরা জেনে নেই, কি কি কারণে আপনার সন্তান মাদকাসক্ত হতে পারে।

০১) খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ

সন্তানের মাদকাসক্তির পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। পারিবারিক অশান্তি, মানসিক চাপ, সামাজিক বঞ্চনা, এমনকি কৌতূহলও এর কারণ হতে পারে। কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখতে পাই, বন্ধুদের প্রভাব মাদকাসক্তির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

ধরুন, আপনার সন্তানের বন্ধুদের একটি অংশ নিয়মিত মাদক সেবন করে। তাদের সাথে মিশে, আপনার সন্তানও হয়তো এই অভ্যাস শিখে যেতে পারে। কৌতূহল, ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা, কিংবা সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চাপে তারাও হয়তো মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

০২) পারিবারিক অশান্তি

বাবা-মায়ের ঝগড়া, অশ্রদ্ধা, অস্থির পারিবারিক পরিবেশ সন্তানের মনে গেঁথে দেয় গভীর আঘাত। এই আঘাত থেকেই জন্মায় অসহায়তা, হতাশা, মানসিক চাপ। আর এই চাপ থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পায় মাদকে।  অশান্ত পরিবারের বাবা মায়েরা সন্তানের যত্ন নেওয়ার মত সময় পান না। ফলে সন্তান বঞ্চিত হয় সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ থেকে। এই অভাব পূরণের জন্য তারা অনেক সময় ভুল পথ বেছে নেয়।

০৩) সন্তানের মানসিক চাপ

যখন একজন কিশোর-তরুণ পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত থাকে, তখন তার মনে অস্থিরতা ও হতাশা দেখা দেয়। এই অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারন, মাদক তাদের অস্থায়ী আনন্দ ও ভুলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

 

এছাড়াও বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চাপ, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার চেষ্টা – এসব কারণেও অনেকে মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। আর অশান্ত পরিবেশ, পারিবারিক সহিংসতা, অভিভাবকদের দিক থেকে পর্যাপ্ত মনোযোগ না পাওয়া – এসব পারিবারিক সমস্যাও একজন কিশোর-তরুণকে মাদকের দিকে ধাবিত করতে পারে।

০৪) কৌতূহল

কিশোর-তরুণ বয়স এক অদ্ভুত সময়। এই সময়ে তাদের মনে নতুন জিনিস জানার চেষ্টা করার প্রবল ইচ্ছা থাকে। এই কৌতূহলই অনেক সময় তাদের ভুল পথে ধাবিত করে। বন্ধুদের দেখে, সিনেমায় দেখে, গানে শুনে মাদক সম্পর্কে তাদের ভেতর এক ধরণের রহস্যময় ধারণা তৈরি হয়। তাদের মনে হয়, একবার চেষ্টা করে দেখলেই বুঝতে পারবো এটা কেমন!

 

এই ভুল ধারণাই তাদেরকে মাদকের প্রথম স্পর্শে এনে দেয়। প্রথমবার হয়তো মজা লাগে, কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারের ফলে শরীরে তৈরি হয় নির্ভরতা। তখন তাদের মাদক ছাড়া থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর এরপর শুরু হয় জীবনের অন্ধকার অধ্যায়। পড়াশোনা, খেলাধুলা, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তারা মাদকের নেশায় ডুবে যায়।

০৫) মাদকের সহজলভ্যতা

বর্তমান সময়ে মাদক যেন হাতের নাগালের মধ্যেই পাওয়া যায়। রাস্তার ধারে, বাজারে, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশেও চোরাচালানকারীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ফলে কৌতূহল, বন্ধুদের দেখাদেখি, কিংবা মানসিক চাপ থেকে মুক্তির আশায় অনেক তরুণ এই বিষাক্ত পথে পা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

মাদকের সহজলভ্যতা কেবল মাদকাসক্তির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে না, বরং সমাজের নীতি-নৈতিকতাও ধ্বংস করছে। মাদকাসক্ত তরুণরা হারিয়ে ফেলছে জীবনের দিকনির্দেশনা, নষ্ট করছে শিক্ষা ও কর্মজীবন। পারিবারিক অশান্তি, অপরাধ বৃদ্ধি, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘন ঘন ঘটছে।

সন্তানের মধ্যে কোন কোন পরিবর্তন দেখলে বুঝবেন সে মাদকাসক্ত?

আমাদের সন্তান, আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাদের হাসি, তাদের কান্না, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের আনন্দ ও উদ্বেগের উৎস। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, এই সুন্দর জীবনের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে অন্ধকারের ছায়া? হ্যাঁ, মাদকাসক্তির মতো ভয়ঙ্কর বিপদ আমাদের সন্তানদের দিকে হাত বাড়াতে পারে।

 

তাই এবার আমরা আলোচনা করবো মাদকাসক্তির কিছু সতর্কতামূলক লক্ষণ সম্পর্কে, যা আপনার সন্তানের মধ্যে দেখলে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। মনে রাখবেন, সব লক্ষণ সবসময় স্পষ্টভাবে ধরা যায় না, তবে সচেতন থাকা এবং সতর্ক থাকাই এই বিপদ থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার একমাত্র উপায়।

০১-পড়াশোনায় অমনোযোগীতা

মাদকাসক্তির প্রভাবে শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাওয়া একটি বড় সমস্যা। মাদক দ্রব্যের প্রভাবে একাগ্রতা হ্রাস পায়, যার ফলে শিশুরা ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে না, পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে তাদের পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল হয়, তারা ক্রমাগত ভাবে পিছিয়ে পড়ে।

 

শুধুমাত্র পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়াই নয়, মাদকাসক্তি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। মাদকাসক্ত শিশুরা বিরক্ত, উদ্বিগ্ন, হতাশায় ডুবে থাকে। তাদের আচরণে অস্থিরতা দেখা যায়।

০২-বন্ধুদের সাথে সময় কমানো

মাদকাসক্তরা প্রায়শই সেই সব বন্ধুদের সাথে সময় কাটায়, যারা মাদকে আসক্ত। যার ফলে মাদকের প্রতি তাদের আসক্তি আরো বৃদ্ধি পায় এবং তাদের সময় ও মনোযোগ মাদকের দিকেই চলে যায়। ফলে নতুন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ কমে যায়, সেইসাথে ভালো ছেলেদের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধন দুর্বল হতে থাকে।

 

তারা এই সময়ে নতুন বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেনা। তবে নতুন বন্ধুরাও মাদকাসক্ত হতে পারে, অথবা মাদকের প্রতি কোন আগ্রহ না থাকলেও মাদকাসক্ত বন্ধুর সাথে সময় কাটানোর কারণে তারাও মাদকাসক্তির ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

০৩-মিথ্যা বলা ও গোপন করার প্রবণতা

মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজে এর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়ে মাদকাসক্ত সন্তানরা লজ্জা ও অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। তাই তারা তাদের মাদকাসক্তি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

 

মাদকাসক্তির ফলে সন্তানরা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে শাস্তির ভয় পায়। অনেকেই আবার আশঙ্কা করে যে তাদের মাদকাসক্তির কথা জানাজানি হয়ে গেলে তাদের পরিবার ও সমাজে অপমানিত হতে হবে। এই ভয় থেকেই তারা মিথ্যা বলে এবং বিষয়টি গোপন করে।

০৪-হঠাৎ করে মেজাজের পরিবর্তন

মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকা সন্তানের মুখে হাসি, বুক ভরে যায় আনন্দে। কিন্তু হঠাৎ করেই যখন সেই সন্তানের মুখে দেখা যায় অন্ধকার, চোখে জ্বলে অজানা আগুন, বুকে জাগে এক অজানা আতঙ্ক। হারিয়ে যায় স্নেহের বন্ধন, ভেঙে পড়ে বিশ্বাসের সেতু। কারণ হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়েছে মাদকের অন্ধকার জগৎ।

 

মাদকাসক্ত সন্তানের মেজাজের অস্থিরতা পরিবারের উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করে। অপ্রত্যাশিত রাগান্বিত আচরণ, বিতর্ক এবং মারামারি পরিবারের শান্তি নষ্ট করে। সন্তানের প্রতি উদ্বেগ ও ভয় পরিবারের সদস্যদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে। আর এই সমস্যা গুলো তখনি ব্যাপক ভাবে দেখা যাবে, যখন আপনার সন্তান মাদকে আসক্ত হবে।

০৫-অস্বাভাবিক ঘুমের ধরন

মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীরা প্রায়শই অতিরিক্ত ঘুমায়। এর কারণ হলো, অনেক মাদকদ্রব্য, বিশেষ করে ওপিওয়েড, ক্লান্তি ও বিষণ্ণতার অনুভূতি সৃষ্টি করে, যার ফলে দীর্ঘক্ষণ ঘুমের প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত ঘুম একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে, যার ফলে স্কুলে বা কাজে সমস্যা হতে পারে।

 

এছাড়াও মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীরা অনিদ্রার সমস্যায়ও ভুগতে পারে। যেমন কোকেন ও মেথাম্ফেটামিন, ঘুমাতে বাধা দেয়। এছাড়াও, মাদকাসক্তির মানসিক চাপ ও উদ্বেগ অনিদ্রার কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা বিরক্তি, মেজাজের পরিবর্তন স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ধাবিত করে থাকে।

সন্তান মাদকাসক্ত হলে আপনার করনীয়ও কী?

সন্তানদের মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এবার আমরা আলোচনা করবো কিভাবে একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি আপনার মাদকাসক্ত সন্তানকে উদ্ধার করতে পারবেন, তাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। 

 

তবে মনে রাখবেন, এই লড়াই কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আপনার ভালোবাসা, ধৈর্য্য এবং সঠিক পদক্ষেপ হবে আপনার সন্তানের মুক্তির মূল চাবিকাঠি। আর এবার আমি ধাপে ধাপে মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুলো তুলে ধরবো। 

০১) স্বীকার ও বোঝাপড়া

একজন পিতামাতার জীবনে সন্তানের মাদকাসক্তির চেয়ে বড় আঘাত আর কিছু হতে পারে না। এই সংবাদ যেন বিষাক্ত অস্ত্রের মতো হৃদয়ে বিদ্ধ করে, ভেঙে ফেলে সকল স্বপ্ন। মনে হয় যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সুখের সংসার। কিন্তু হতাশায় ভেঙে পড়ার সময় নেই। এখন প্রয়োজন ধৈর্য, শক্তি এবং, সবচেয়ে বেশি, বোঝাপড়ার মনোভাব।

 

সন্তানের মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমে আমাদের তাকে বুঝতে হবে, তার পাশে দাঁড়াতে হবে। অন্ধকারের অস্বীকারের পরিবর্তে বোঝাপড়ার আলোয় এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, এই লড়াই কেবল আপনার নয়, আপনার সন্তানও আপনার সাথে আছে। তাই  ধৈর্য, ভালোবাসা এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে অবশ্যই সমাধান করার চেষ্টা করবেন।

০২) সন্তানের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা

শাস্তি, তিরস্কার – এগুলো এই মুহূর্তে কাজে লাগবে না। বরং, আপনার সন্তানকে বুঝাতে হবে, তার সাথে কথা বলতে হবে। জানতে হবে কে তাকে এই ভুল পথে টেনে নিয়েছে। হয়তো একাকীত্ব, মানসিক অস্থিরতা, বন্ধুদের প্রভাব, সমাজের চাপ – নানা কারণেই একজন কিশোর-তরুণ মাদকের আশ্রয় নিতে পারে।

মনে রাখবেন, আপনার সন্তান ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথে হাঁটেনি। সে বিভ্রান্ত, হতাশ, হয়তো কিছুটা দুর্বল হয়ে এই পথে পা বাড়িয়েছে। তাই এই মুহূর্তে তার সাহায্য ও সমর্থনের প্রয়োজন। তাকে ধৈর্য্য ধরে বোঝাতে হবে, ভালোবাসার মাধ্যমে সঠিক পথ দেখাতে হবে।

যদিওবা এই লড়াই কঠিন হবে, আবার অনেক দীর্ঘ হবে। কিন্তু হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন, আপনি একা নন, বরং অনেক পিতা-মাতা আছে যারা একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং তাদের সন্তানকে মাদকাসক্তির মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

০৩) পেশাদারদের সাহায্য নিন

এই লড়াইয়ে একা থাকার কোন প্রয়োজন নেই। তাই একজন অভিজ্ঞ মনোবিদ বা মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। তারা আপনার সন্তানের মাদকাসক্তির কারণ নির্ণয় করতে এবং একটি কার্যকর চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করবেন। মনে রাখবেন, এই বিষয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। সাহায্য চাওয়া মানে দুর্বলতা নয়, বরং আপনার সন্তানের প্রতি আপনার ভালোবাসার প্রমাণ।

০৪) ধৈর্য্য ধরুন, হাল ছেড়বেন না

মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি রাতারাতি সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়া। এই পথে অনেক বাধা আসবে, ভুলত্রুটি হবে, তাই হতাশ হবেন না। আপনার সন্তানের প্রতি বিশ্বাস রাখুন এবং তার প্রতি ধৈর্য ধরুন। তার ছোট ছোট পরিবর্তনকে উৎসাহিত করুন। মনে রাখবেন, এই সময়ে প্রতিটি পদক্ষেপ এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

 

প্রথম দিকে মাদকাসক্তির সাথে লড়াই করা আপনার কাছে মানসিকভাবে ক্লান্তিকর মনে হতে পারে। আপনার সন্তান বিরক্তিকর আচরণ করতে পারে, মিথ্যা বলতে পারে, এমনকি আপনাকে দোষ দিতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরুন এবং রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মনে রাখবেন, মাদকাসক্তি তার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করেছে, তার স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও আচরণে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।

০৫) নতুন সুযোগ ও পরিবেশ

সন্তানের মনকে মাদক থেকে দূরে রাখতে নতুন শখ ও কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করবেন। এতে থাকতে পারে খেলাধুলা, সঙ্গীত, শিল্পকলা, বা স্বেচ্ছাসেবক কাজ। নতুন কিছু শেখা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং জীবনে নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

 

আর মাদকাসক্ত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ কমানো জরুরি একটি বিষয়। তাদের পরিবর্তে, নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন যারা মাদকাসক্ত নয়। ইতিবাচক মানুষেরা তাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে এবং ভালো পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

মাদকাসক্তি নিরাময়ে রিহ্যাব সেন্টার গুলো কি ভুমিকা রাখে?

এতক্ষনের আলোচনা থেকে আমরা মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে জানলাম। তো এবার আমাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে হবে। সেটি হলো, মাদকাসক্তি নিরাময়ে রিহ্যাব সেন্টার গুলো কি ভুমিকা রাখে। তো চলুন এবার তাহলে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

 

মাদকাসক্তি শুধু ব্যক্তির একার সমস্যা নয়, এটি ভেঙে পড়ে পরিবার, সমাজ সকলকে। তাই মুক্তির পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে পুনর্বাসন কেন্দ্র। অভিজ্ঞ চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, থেরাপিস্ট এবং নার্সদের একটি দল এখানে রোগীদের মানসিক ও শারীরিক পুনর্বাসনের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে।

 

পুনর্বাসন কেন্দ্রে কেবল ডিটক্সিফিকেশন করা হয় না, বরং রোগীদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলার জন্য বিভিন্ন থেরাপির ব্যবস্থা থাকে। একক এবং একাধিক থেরাপি, জ্ঞানাত্মক আচরণ থেরাপি, কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ, শিল্পকলা থেরাপি – এই সকলের মাধ্যমে রোগীরা নতুন করে জীবন শুরু করার আত্মবিশ্বাস অর্জন করে।

আপনার জন্য আমাদের শেষকথা

মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা নিয়ে আজকে বিষদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তো যদি আপনার সন্তান কোনোভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে তাকে সুস্থ জীবনে ফিরে আনার জন্য সমস্ত চেষ্টা করবেন। আর এই বিষয়ে আরো নতুন কিছু জানতে হলে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।