কনভার্সন ডিসঅর্ডার কি: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কনভার্সন ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ যা মানসিক চাপের কারণে শারীরিক লক্ষণ হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই রোগটি আমাদের মধ্যে অজানা থাকার কারণে অনেক সময় এটি জটিল বলে মনে হয়। তাই আজ আমরা জানব কনভার্সন ডিসঅর্ডার কি, কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে।

কনভার্সন ডিসঅর্ডার কী?

হিস্টেরিয়া বা কনভার্সন ডিসঅর্ডার হলো একটি মানসিক রোগ, যা ফাংশনাল নিউরোলজিকাল সিম্পটম ডিসঅর্ডার নামেও পরিচিত। কনভার্সন ডিসঅর্ডার মানসিক সমস্যাগুলো শারীরিক লক্ষণ হিসেবে প্রকাশিত হয়, যেমন খিঁচুনি, ফিট পড়া, গলা ব্যাথা ইত্যাদি। অনেক সময় এটি স্নায়বিক সমস্যার সাথে মিলিয়ে যায়, তবে এটি মূলত মানসিক রোগ।

কনভার্সন ডিসঅর্ডার কত ধরনের?

কনভার্সন ডিসঅর্ডার মূলত দুটি প্রধান ধরনের হয়ে থাকে:

  1. কনভার্সন হিস্টেরিয়া: এ ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন- পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি।
  2. ডিসোসিয়েটিভ হিস্টেরিয়া: এ ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক বা সেনসরি সিম্পটম প্রকাশ পায়। যেমন- ঘুমের মধ্যে হাঁটা।

কনভার্সন ডিসঅর্ডারের কারণ

চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনো কনভার্সন ডিসঅর্ডারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানতে পারেনি। তবে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি রোগীর মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে হয়ে থাকে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব: যাদের অন্তর্মুখী স্বভাব আছে, তারা নিজেদের মনের কথা সহজে প্রকাশ করে না। এদের মধ্যে মানসিক চাপ জমা হয়, যা কনভার্সন ডিসঅর্ডার সৃষ্টি করতে পারে।
  • পারিপার্শ্বিক অবস্থা: ট্রমাটিক পরিস্থিতি, মানসিক অবসাদ, ভয়, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি বিষয়গুলো কনভার্সন ডিসঅর্ডার হওয়ার উৎস হতে পারে।
  • মানসিক দ্বন্দ্ব: মানসিক চাপ ও দ্বন্দ্বের কারণে কনভার্সন ডিসঅর্ডার হতে পারে।
  • বংশগতির ধারা: পরিবারে কনভার্সন ডিসঅর্ডার থাকলে এর সম্ভাবনা বাড়ে।

কনভার্সন ডিসঅর্ডারের লক্ষণ

কনভার্সন ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলো সাধারণত শারীরিক বা স্নায়বিক হয়ে থাকে। লক্ষণগুলো প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত:

  1. Motor Symptoms: খিঁচুনি হওয়া, হঠাৎ ফিট পড়া, শরীরের কোনো অংশ অবশ হওয়া, ঢোক গিলতে সমস্যা হওয়া, হাত-পা কাঁপাকাঁপি ইত্যাদি।
  2. Sensory Symptoms: চোখে দেখতে না পাওয়া, কানে শুনতে না পাওয়া, স্পর্শ অনুভূত না হওয়া ইত্যাদি।

কনভার্সন ডিসঅর্ডার এর চিকিৎসা

কনভার্সন ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ, তাই এর চিকিৎসায় মানসিক অবস্থার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। চিকিৎসার কয়েকটি পদ্ধতি হলো:

  1. Explorative Psychotherapy: মানসিক চাপের কারণ খুঁজে বের করা এবং তা নিয়ে আলোচনা করা।
  2. কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT): রোগীর নেতিবাচক চিন্তাধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে মানসিক অবস্থার উন্নতি করা।

কনভার্সন ডিসঅর্ডার চিকিৎসা কেন্দ্র

বাংলাদেশে অনেক মানসিক হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে কনভার্সন ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা করা হয়। এর মধ্যে Omega Point অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান, যা মানসিক রোগ ও ড্রাগস জনিত সমস্যার সমাধান প্রদান করে।

মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানতে, আমাদের বিশদ ব্লগ “মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির ৫ কার্যকর উপায়” পড়ুন। এটি আপনাকে সহায়ক পরামর্শ প্রদান করবে।

 

উপসংহার

কনভার্সন ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ, যার সঠিক কারণ এখনও নির্ণয় করা যায়নি। তবে মানসিক চাপ ও দ্বন্দ্ব এর প্রধান কারণ হতে পারে। চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। মানসিক সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে কনভার্সন ডিসঅর্ডার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।